একসিডেন্ট (Accident)

Share on: 

রবিবার, এই দিনের কথা শুনলে যেন মনে মনে খুব আনন্দ হয়। ছুটির দিন বলে কথা, কাজ থাকেনা তা নয় তবে খুব বেশি কাজ থাকেনা, কিন্তু আজ আমি অনেক কাজ করেছি এই যেমন বাজার করা, ঘর গুছানো, ছেলে কে সময় দেওযা, ইত্যাদি। আসলে অফিসের কাজে এত বেস্ত থাকি যে সময় পায়না। আগে অবশ্য এই সব কাজ করতে পারতাম না তবে সময় এর সাথে সাথে সব কিছু মানিয়ে নিতে হয়েছে। মাঝে মাঝে পুরোনো কথা মনে পড়লে ভালো লাগে আবার ভয়ে বুক কেপে ওঠে। সেই দিনগুলি কখনোই ভোলা যাবে না।

তাহলে শুরু থেকে শুরু করা যাক…সেদিন ছিল কলেজে স্বরস্বতী পুজো, হলুদ রঙের পাঞ্জাবিতে বেশ মানিয়েছিল জয়ন্ত কে। আমি অবশ্য সাদা রঙের শাড়ী পরে ছিলাম। সেদিন আমাদের প্রথম আলাপ আর তার পর প্রেম। আমার বয়স তখন বাইশ হবে আর জয়ন্তর চব্বিশ, প্রথম দিন থেকেই আমাদের মধ্যে একটি সম্পর্ক গড়ে ওঠে আর আমি পিছিয়ে পড়ার কথা ভাবতে পারিনি। জানেন, জয়ন্তর বেপারে বাড়িতে জায়ানোর পর বাবা মা রাজি হননি। জয়ন্তর বাবা পুলিশ অফিসার এই ছাড়া আর কোন নিজেস্ব পরিচয় নেই তার। আমাদের বিয়েটা অবশ্য বাবা মা এর অমতে হয়েছে, জয়ন্ত তখন চাকরি পায়নি আর একটা বেকার ছেলের সাথে কোন মা বাবা মায়ের বিয়ে দেবেন। আমি ভালোবেসে জয়ন্ত কে বিয়ে করেছি আর তার পর সংসারের হাল ধরার জন্য চাকরি করতে শুরু করলাম।

বিয়ের আগে পর্যন্ত সব ঠিক ছিল, মনে হচ্ছিল আমি যেন রাজপ্রাসাদে রানী, জয়ন্ত আমায় ছাড়া থাকতেই পারবেনা কিন্তু কেউ কি জন্য কপালটা এতটাও ভালো নয়। বিয়ের কিছু মাস পর জয়ন্ত চাকরি পাই ছোট্ট একটি কোম্পানিতে আর সেই থেকেই শুরু হয় আমার উপর অত্যাচার। ভয়ঙ্কর ভাবে আক্রমণ করা হতো আমায়। কখনো খাবার নিয়ে সমস্যা, কখনো আমার চাকরি নিয়ে..। মা কে জানালাম সব ঘটনা, মা আমায় বোঝালো কি ভাবে মানিয়ে নিতে হয় আর একটা সন্তান হয়ে গেলে সব কিছু ঠিক হয়ে যায়। এর পর আমার ছেলে জন্ম হয় আর তার পর সত্যি অনেক সমস্যা কমে গেছিলো। আমি সেই পুরোনো জয়ন্ত কে যেন ফিরে পেলাম। কিছু মাস পর আবার শুরু হলো সেই একই নাটক। গায়ে হাত থেকে শুরু করে বেল্ট দিয়ে মার আর আমার ছেলে কে মেরে ফেলার হুমকি..

এই ভাবেই তিনটে বছর কেটে যায় আর তার পর আসে সেই দিন.. রোজ সকালে চা খাবার পর জয়ন্ত অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছিল হটাৎ একটা বিকট শব্ধ..

-কি হলো?

ছুটে গিয়ে দেখলাম, জয়ন্ত মাটিতে পড়ে আছে, ওর পুরো শরীর এ ফোসকা পড়েগেছে.. যন্ত্রনায় ছট পট করছে সে, আর তার পরেই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় কিন্তু মারা যায় জয়ন্ত।

পুলিশ জানায় এটি একসিডেন্ট, গিজার ব্লাস্ট হয়ে পুরে গিয়ে মারা যায় জয়ন্ত। একসিডেন্ট না বললে হয়তো আমি ধরা পড়ে যেতাম। গিজার এর সুইচটা মাঝ রাতে অন করে রেখেছিলাম, আমি জানতাম যে জয়ন্ত ছাড়া আর অন্য কেউ যাবে না.. এটা তো হতেই পারে যে অন করার পর ভুলে গেছে বা অন আছে সেটা দেখিনি… তাই একসিডেন্ট এই কথাই মানায়। অবশ্য আমি ধরা পড়লোও বেঁচে যেতাম এটা নিশ্চিত। ওভাবে ছট পট করতে দেখে খুব কষ্ট হয়েছিল কিন্তু মনে মনে এত দিনের জ্বালা যেন দূর হচ্ছিল।

এখন আমি ছেলে কে নিয়ে বেশ সুখে আছি, চাকরি করছি, নিজের জীবন স্বাধীন ভাবে কাটাচ্ছি। আমি জানতাম জয়ন্ত কখন আমায় ডিভোর্স দেবে না আর পুলিশ এর কাছে যাওয়ার মানে জয়ন্তকে আরো খেপিয়ে তোলা, কোনো মানে হয়না, তাই নিজে কে বাঁচাতে এইটুকু সেলফিশ তো হতেই হতো আর তাছাড়া ওর সাথে থেকে আমি বুঝতে পারি যে আমার আয় ওর থেকে বেশি বলে জয়ন্তর মনে ঈর্ষা জন্মেছিল আই এই সমস্যার এই একটি মাত্র সমাধান তাই আমি আর সময় নষ্ট করতে চাইনি।

সমাপ্ত।


English translation of this story : Accident

For updates, follow us on Instagram : Bridge Blog

Cover art courtesy : Diyali Bhalla